একজন কৃষক বলেছেন, আকাশে বিদ্যুত্
চমকিয়ে কখন চলে যায় তাও বোঝা
যায়। নিজের চোখে দেখা যায়। কিন্তু
আমাদের বিজলী বাতি কখন আসে আর
কখন চলে যায় তা বোঝা যায় না।
কিছুদিন আগে বাজেট নিয়ে
আলোচনা করার সময় তিনি এ মন্তব্য
করেছিলেন। তার এ কথাগুলো
প্রচারিত হয়েছে একটি বেসরকারি
টিভি চ্যানেল থেকে। বর্তমান
মহাজোট সরকারের আমলে বিদ্যুত্
সরবরাহের ক্ষেত্রে অনেক উন্নতি
সাধিত হয়েছে। ঘন ঘন বিদ্যুত্ চলে
যাওয়ার মাত্রা হ্রাস পেয়েছে
ঢাকাসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোতে।
কিন্তু আমাদের গ্রামগুলোতে অবস্থার
তেমন উন্নতি হয়নি। এই বিদ্যুত্ আসে, এই
চলে যায়। একবার চলে গেলে আবার
কখন যে বিদ্যুত্ ফিরে আসবে তার
কোনো নিশ্চয়তা থাকে না। তাতে
ভোগান্তি হয় কৃষকের। বিঘ্নিত হয়
পানি সেচ। সে তো জানা গেল
যেখানে বিদ্যুত্ সরবরাহ আছে
সেখানকার অবস্থা। কিন্তু যেখানে
এখনো বিদ্যুতের লাইন পৌঁছেনি
তাদের ভোগান্তি অন্যরকম। তারা
দরখাস্ত দিয়ে অপেক্ষা করে আছে
বিদ্যুত্ সংযোগ পাওয়ার জন্য। কিন্তু
বছরের পর বছর চলে যায়, তাদের সেই
অপেক্ষোর শেষ হয় না। আমার গ্রাম
ঘাটিয়ারার (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) দক্ষিণ
পাশে এক বিশাল এলাকায় বোরো
ধানের আবাদ হয় প্রতিবছর। সেখানে
দরকার হয় সেচের। আট দশ বছর আগে
গ্রামবাসী আবেদন করেছিল সেখানে
বিদ্যুত্ লাইন দেওয়ার জন্য। এর পর খুঁটি
বসানো হয়েছে বিদ্যুতের লাইন
টানার জন্য। কিন্তু আজও গ্রামবাসী
অপেক্ষায় আছে সেই বিদ্যুত্ লাইনের
জন্য। তাদের এই প্রতীক্ষার শেষ হবে
কবে কেউ জানে না। বিদ্যুতায়িত
নলকূপের মাধ্যমে সেচের খরচ হয় কম।
তাতে হ্রাস পায় উত্পাদন খরচ। সে
কারণে বিদ্যুত্ সরবরাহের জন্য কৃষকের
আগ্রহ বেশি।
বিদ্যুতের বিকল্প জ্বালানি তেল
দিয়ে সেচকার্য পরিচালনার প্রথা
এদেশে দীর্ঘ দিনের। এখনো শতকরা
প্রায় ৬৫ ভাগ সেচ প্রদান করা হয় তেল
দিয়ে। এর জন্য দরকার ডিজেল। গ্রামের
কৃষকগণ অনেক চড়া দামে ডিজেল
সংগ্রহ করে সেচের কাজ চালায়। ৫-৬
বছর আগে জ্বালানির দাম দ্রুত বেড়ে
গিয়েছিল আন্তর্জাতিক বাজারে।
তখন বাংলাদেশেও লাফিয়ে
লাফিয়ে বৃদ্ধি করা হয়েছিল
জ্বালানির দাম। আন্তর্জাতিক মূল্যের
সমন্বয় করে কেরোসিন ও ডিজেলের
মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছিল প্রতি
লিটার ৬৮ টাকায়। এর পর আন্তর্জাতিক
বাজারে জ্বালানির মূল্য হ্রাস
পেয়েছে। দ্রুত তা নেমে এসেছে
প্রায় এক তৃতীয়াংশে। পৃথিবীর
বিভিন্ন দেশে, এমনকি ভারতেও
জ্বালানির আন্তর্জাতিক মূল্যের সমন্বয়
করে কমানো হয়েছে অভ্যন্তরীণ মূল্য।
কিন্তু বাংলাদেশের কৃষকগণ সেই
সুবিধা পায়নি। এবারের পুরো বোরো
মৌসুমেও কৃষকগণ ডিজেল কিনেছে
প্রতি লিটার ৬৮ টাকা দরে। অতি
সম্প্রতি ডিজেল ও কেরোসিনের দাম
কমানো হয়েছে লিটার প্রতি ৩ টাকা।
তখন বোরোর মৌসুম শেষ হয়ে গেছে। ওই
কিঞ্চিত্ মূল্যহ্রাসও কৃষকের কোনো
উপকারে আসেনি। বর্তমান মহাজোট
সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর তেলের
উচ্চমূল্যের কারণে কৃষকদের জন্য ঘোষণা
করেছিল নগদ ভর্তুকি। এর জন্য ১০ টাকা
দিয়ে ব্যাংক একাউন্ট খোলার সুযোগ
দেয়া হয়েছিল কৃষকদের। ভর্তুকির টাকা
সরাসরি প্রদান করা হয়েছিল কৃষকদের
ব্যাংক একাউন্টের মাধ্যমে। তাতে
উত্সাহিত হয়েছিল কৃষকগণ। নগদ ভর্তুকি
ঈপ্সিত লক্ষ্য অর্জনে সফল হয়েছিল। এ
নিয়ে একটি গবেষণা পরিচালনা করা
হয়েছিল বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা
প্রতিষ্ঠানের কৃষি অর্থনীতি বিভাগ
থেকে। তাতে দেখা যায়, নগদ ভর্তুকি
ছিল উত্পাদন বৃদ্ধির জন্য সহায়ক। এর পর
কেটে গেছে অনেক বছর। এখনো
মহাজোট সরকারই ক্ষমতায় আছে। কিন্তু
কৃষকদের জন্য নগদ ভর্তুকির সিকে আর
ছেঁড়েনি। কৃষকদের প্রায় এক কোটি
ব্যাংক একাউন্ট গত ৬/৭ বছর ধরে শূন্যই
পড়ে আছে।
কৃষিকাজে সবচেয়ে বেশি খরচ শ্রমের
মজুরি। এর পরই পানি সেচের খরচ। তার
পর রয়েছে রাসায়নিক সার।
আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের মূল্য
হ্রাসের ফলে সেচ ও সারের মূল্য বিপুল
পরিমাণে কমেছে। কিন্তু
বাংলাদেশে তা কমেনি। বরং
বেড়েছে। ডিজেলের দাম সম্প্রতি যে
হারে কমানো হয়েছে তা খুবই
অকিঞ্চিতকর। লিটার প্রতি কমপক্ষে
যে খাতে ৩০ টাকা কমানো উচিত
ছিল, সেখানে কমানো হয়েছে মাত্র
৩ টাকা। সারের আন্তর্জাতিক মূল্য
হ্রাস পাচ্ছে বলে বাংলাদেশ
সরকারের ভর্তুকি কমছে। কিন্তু কৃষকের
প্রদত্ত মূল্য কমছে না। তার প্রতিফলন
ঘটছে বাড়তি উত্পাদন খরচ। গত বছর প্রতি
কেজি বোরো ধানের উত্পাদন খরচ
ছিল ২০ টাকা। এবার তা দাঁড়িয়েছে
২১ টাকায়। এটা সরকারি হিসেব।
বেসরকারি হিসেবে প্রতি কেজি
ধানের উত্পাদন খরচ ২৩ টাকা। যদি
সরকারি হিসেবটাকেই সঠিক ধরা হয়
তাহলে মণ প্রতি ধানের উত্পাদন খরচ
দাঁড়ায় ৮৪০ টাকা। কিন্তু প্রতি মণ ধান
বিক্রি হচ্ছে এলাকা ভেদে ৪০০
থেকে ৫৮০ টাকায়। কৃষি বিপণন
অধিদপ্তর থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে
আমাদের কৃষকগণ এবারের বোরো
ধানের জন্য লোকসান গুণছে মণপ্রতি
২৬০ থেকে ৪৪০ টাকা। বিদেশি
সংস্থা ইউএসএসইডি বলছে, বোরো ধান
বিক্রি করে কৃষকের যে খরচ হয় ধান
বিক্রি করে তার ১৮ শতাংশ কম টাকা
উঠে আসে। একটি প্রাতিষ্ঠানিক
সমীক্ষা থেকে দেখা যায়, আমন ও আউস
মৌসুমের তুলনায় বোরো মৌসুমে
ধানের যোগান থাকে বেশি। মোট
ধান উত্পাদনের প্রায় ৫৬ শতাংশেরই
যোগান আসে বোর
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন